দ্য সার্চারস(১৯৫৬) মুভি রিভিউ | The Searchers (1956) movie review


এই রিভিউ এর সম্পূর্ণ ক্রেডিট ইয়াসিন মেহেদী ভাই এর।

m ➮ The Searchers (1956)
Country ➮ USA
Directed By ➮ John Ford
Cast ➮ John Wayne, Jeffrey Hunter, Natalie Wood, Vera Miles Etc...
Rotten Tomatoes ➮ 98%
Personal Grading ➮ A+

সর্বকালের সেরা ওয়েস্টার্ন ফিল্মের আলাপচারিতে অধিকাংশ সময়েই অগ্রগণ্যতা পেয়ে থাকে দ্যা গুড, দ্যা ব্যাড অ্যান্ড দ্যা আগলী শীর্ষক সিনেমাটি। এর অনন্তরই যে চলচ্চিত্রটির নাম উঠে আসে সেটি হল ওয়েস্টার্ন ফিল্মের গডফাদার জন ফোর্ডের নির্মিত অনবদ্য সৃষ্টি দ্যা সারচার্স।

মুভিটির পূর্বে জন ফোর্ডের গুণানুবাদ করাটাই শ্রেয় হবে বলে মনে করি। তাকে আখ্যায়িত করার বেলায় আমার চিন্তনের পরকলায় সবার আগে দুটো কথারই প্রতিফলন ঘটে। সেগুলোই প্রকাশ করছি। হলিউডে এককালে একযোগে সব পরিচালকের আরাধনার পাত্র ছিলেন সিটিজেন কেইনের ডিরেক্টর ওরসন ওয়েলস। সেই ওয়েলসকে এক সাক্ষাৎকারে তার প্রিয় পরিচালকের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে প্রত্যুত্তর আসে তিনি পুরাতন গুরুদেরই সবচেয়ে বেশী পছন্দ করেন যেই গুরুরা যথাক্রমে জন ফোর্ড, জন ফোর্ড এবং জন ফোর্ড। আবার জন ফোর্ডের ফিল্মগুলো থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েই জাপানিজ কিংবদন্তী আকিরা কুরোসাওয়া বানিয়েছিলেন এপিক সব সামুরাই মুভি যেগুলো আবার ইন্সপিরেশন হিসেবে কাজ করেছিলো সার্জিও লিওনীর সিনেমাগুলোর পিছনে। সেই লিওনীরই শ্রেষ্ঠ উদ্ভাবন লিখনীর প্রারম্ভেই উত্থাপন করা দ্যা গুড, দ্যা বাড অ্যান্ড দ্যা আগলী। এভাবেই বিভিন্ন শিকলের একবারে অগ্রভাগের ভূমিকা পালন করে আসছেন ফ্যান্টাবিউলাস জন ফোর্ড।

সারচার্সের সারাংশটা এবার তুলে ধরি.... সুদীর্ঘ আট বছর আমেরিকান গৃহযুদ্ধ ও ম্যাক্সিকান বৈপ্লবিক যুদ্ধে লড়াই করার পশ্চাত ইথেন এডওয়ার্ডস অবশেষে প্রত্যাগমন করে তার ভাই ও তার পরিবারবর্গের কাছে। কিন্তু ইথেনের ফিরে আসতে না আসতেই দেখা দেয় বিপত্তি। উধাও হতে থাকে তার পাড়া-পড়শীর গবাদি পশু। এমতাবস্থায় টেক্সাস রেঞ্জার্সরা আগমন ঘটায় এবং ইথেনসহ কিছু সহযোগী নিয়ে নেমে পড়ে বিষয়টি তদারক করতে। শীঘ্রই তারা হৃদয়ঙ্গম করতে পারে এসবই আসলে তাদের ফ্যামেলী থেকে দূরে সরানোর জন্য ইন্ডিয়ানদের পাতা ফাঁদ। এজন্য অচিরেই তারা ফিরে যায় নিজেদের আবাসে। কিন্তু সেখানের দৃশ্যটা হয়না মোটেও সুখকর। উপরন্তু অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয় ইথেনের ভাগ্নীদ্বয়কে। এজন্য ইথেন, তার ভ্রাতার পালক পুত্র মার্টিন ও অন্যান্যদের সম্মুখে একটাই মিশন, সেই মেয়েদেরকে উদ্ধার করা। এই অভীষ্ট লক্ষ্যে তারা কি পারবে সফলতার আমর্শ পেতে? সেটিরই জবাব মিলবে সারচার্সে।

এই ক্লাসিক আমেরিকান ওয়েস্টার্ন ফ্লিকটি দেখলে প্রথমেই দৃষ্টি কাড়ে ভিজ্যুয়ালের দ্বারা ভাবোচ্ছ্বাস এবং অত্যন্ত সুন্দর ল্যান্ডস্কেপ বা প্রাকৃতিক ভুদৃশ্য। আইকনিক ওপেনিং ও ক্লোজিং শটে তমসাবৃত গৃহের দ্বারদেশ দিয়ে রক্তিম প্রান্তরের সঙ্গে ঘেঁষে থাকা আনীল অন্তরীক্ষের চমৎকার দৃশ্য অন্তরকে নাড়া দিয়ে যায় নিমিষেই। শট দুটি প্রায় অভিন্ন হলেও সেগুলোতে ফুটে উঠে নিজেদের স্বতন্ত্র তাৎপর্য। ওয়াইল্ড-ওয়েষ্ট এডভেঞ্চার ফিল্মটিতে চমৎকারী ক্যামেরা মুভমেন্টের সঙ্গে জন ফোর্ড ভিজ্যুয়াল স্টোরিটেলিংয়ে নিজের প্রভুতারও জানান দেন। ডায়লগে অপভাষার সঙ্গে হাস্যরসের বেশ ব্যবহার করা হয়েছে। ইন্ডিয়ানদের সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধের সীনগুলোও দারূণ ও মজাদার। চলচ্চিত্রটিতে ইথেনের ভূমিকায় জন ওয়েইন দর্শিয়েছেন আমেরিকার সিনেমা ইতিহাসের অন্যতম উৎকৃষ্ট অভিনয় নৈপুণ্যতা। জন ফোর্ডের সঙ্গে তার যুগলবন্দি থেকে এমন বেশ কিছু প্রভাববিশিষ্ট সিনেমাই বেরিয়ে এসেছে। এই ফিল্মটির চরিত্রটির সঙ্গে জনের বাহুবন্ধন এতটাই পোক্ত হয়ে গিয়েছিলো যে সেটির নামানুসারে নিজের এক ছেলের নামও রেখেছিলেন ইথেন ওয়েইন। এছাড়া জেফরীর রোল প্লে করা মার্টিন চরিত্রটি সিনেমাটিতে ইতিবাচকতার যোগানদাতা হিসেবে কার্য সাধন করেছে। হিচককের সাইকো ফিল্মে নজর কাড়তে অসমর্থ হলেও লরার রোলে ভিরা মাইলসকে বেশ লাবণ্যময়ী ও আকর্ষণীয় দেখিয়েছে।

সিনেমাটির এত শত যশ থাকা সত্ত্বেও এটির ওপরে অনেকেরই রয়েছে ঘৃণার বেশ ঘটঘটা। এর প্রধান কারণ ফিল্মটির কেন্দ্রীয় চরিত্র ইথেন এডওয়ার্ডসের মধ্যে বর্ণবাদ ও নারী বিদ্বেষের মত কদর্য বৈশিষ্ট্যের অধিষ্ঠান লক্ষ করা যায়। কিন্তু তাদের অনেকেই হয়তো অস্মৃত হয়ে যায় যে স্কোরস্যাসির ট্যাক্সি ড্রাইভারে ট্রাভিস বিকলের মাঝেও অনুরূপ বৈরভাবাপন্ন অ্যান্টি হিরো দীপ্তিমান হয়। সেই ক্যারেক্টারের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অপ্রীতিকর হলেও ফিল্মটি কিন্তু ঠিকই দর্শকদের অনুরাগে লেপন করা। উপরন্তু দ্যা সারচার্সের মূল নিষ্কর্ষ মোটেও সেসব আক্রোশকে সরব সমর্থন করা নয়, বরংচ সেগুলোতে সমালোচনা বর্ষণ করা। ভ্রান্ত বিশ্বাস যে মনুষ্যত্বকে নাশ করে সেই উপলব্ধি পরবর্তীতে ইথেনের ভিতরে জাগার মাধ্যমেই সিনেমাটির সেই বিষয়বস্তু প্রতিভাসিত হয়। ইথেনের মত জটিল ও সমস্যাগ্রস্ত ক্যারেক্টারটিই সিনেমাটিকে করে তুলে আরও চিত্তহারী।

জন ফোর্ড যেভাবে সিনেমাটি শুট করেছেন সেটির বিবেচনায় এটি হয়তো ইতিহাসের সুন্দরতম ওয়েস্টার্ন ফিল্ম কিন্তু থীমের বিচারে অন্ধকারতমগুলোর মধ্যে অন্যতম। বিভিন্ন ইন্টারভিউতে ফোর্ডকে যতটা উদ্ভট দেখাতো, ফিল্ম তৈরীর ক্ষেত্রে তিনি ততটাই পরম কুশলতা ও প্রভুত্বের জানান দিতেন। তিনি জানতেন কিভাবে হিউমার ও গুরুগম্ভীর উপাদানের মাঝে সাম্যাবস্থা বজায় রেখে কাজে লাগাতে হয়। সিনেমাটিতে একদিকে ইন্ডিয়ানদের আক্রমণের বিপক্ষে তৈয়ার হবার মত স্নায়ুচাপ বাড়িয়ে দেয়া সিক্যুয়েন্স এবং অন্যদিকে মুখে হাসি এনে দেওয়া স্ল্যাপস্টিক ফাইটিং সীন সেই দিকটির দিকেই ইঙ্গিত জ্ঞাপন করে।

মনোস্তাপ, ক্রোধ, আপন ভুল স্বীকার না, সর্বোপরি মানুষের হিংস্র দিকগুলো সারচার্সে যেমন প্রকাশ পায় তেমনি এতে আশাস্থলকে প্রাণোচ্ছল রেখে পরাভব বরণ না করার মত দৃষ্টান্তের অভ্যুদয় ঘটে। ভিজ্যুয়ালে মহনীয়তা ও বিশালতা সংবাহন করা সারচার্স শুধু ওয়েস্টার্ন জনরাই নয় পুরো সিনেমা ইতিহাসেরই অত্যুত্তম ও অনন্যসুলভ একটি প্রাপ্তি।

No comments

Powered by Blogger.