একটি ক্ষুদ্র গল্প-১



সায়মা যেনো কোনোভাবেই ক্লাসে মনোনিবেশ করতে পারছে না। আজ তার মনটা বেশ খারাপ। আজকেই ক্লাসের শেষ দিবস। প্রায় মাস তিনেক পূর্বে বরিশাল থেকে ফার্মগেট এসেছিলো কোচিং করার উদ্দেশ্যে। প্রায় সকলে সায়মারই মতো দেশের নানা প্রান্ত থেকে এসেছে কোচিং করতে। কাজেই সায়মা এদের কাউকে চিনতো না। কারু সঙ্গে তার সখ্যতাও গড়ে উঠেনি। আসলে এডমিশনের এর এই সময়টাই যেনো এমন। প্রচন্ড পড়াশোনার চাপে অন্য কোনোদিকে দমটাও ফেলা সম্ভবপর হয়ে উঠেনা। তবুও এ কয়েকদিনে এই ফার্মগেট আর কোচিং নিয়ে কাটানো সময়গুলির প্রতি কেমন এক মায়া তৈরি হয়ে গেছে। সময়গুলো বেশ দ্রুতই পার হয়ে গেছে। সায়মা বেশ বুঝতে পারে, নিতান্তুই যদি দৈবিক কিছু না ঘটে তবে হয়তো এদের কারু সঙ্গেই আর কখনো সাক্ষাৎ হবে না। সায়মা খুব করে চাইছে অন্তত এই পাশের সারিতেই বসা ছেলেটির সাথে তার যোগাযোগ থাকুক। ছেলেটির নাম সায়মা জানে না। কোনো একদিন ক্লাস করছিলো এমনই কোনো এক সময় আচমকা ছেলেটির দিকে চোখ পড়েছিলো সায়মার। ক্ষণিক চোখাচোখি, মুহূর্তেই দুজনে লেখচারে মনোনিবেশ করে। কিন্তু এর পর প্রায়ই কিভাবে, কোন উপায়ে এতগুলো মানুষকে ফাঁকি দিয়ে সহসাই এই একজনকেই খুঁজে পেতো সায়মার চোখযোগল তার হদিস সায়মা জানে না। একটা সময় রোজই ছেলেটির দিকে সায়মার চোখ পড়তে লাগলো। একদিন সায়মার মনে হলো, সে কি ইচ্ছে সেচ্ছায়ই কাউকে খুঁজছে! কিন্তু এ চোখের দেখা চোখ পর্যন্তই সীমিত রইলো। কখনো যে কাছে গিয়ে আলাপ করবে সে সাহস হয়ে ওঠে নি। কিন্তু আজকের পর হয়তো আর কখনই সায়মার চোখজোড়া ছেলেটির কোনো সন্ধান পাবে না। সায়মার খুব করে ইচ্ছে করতে লাগলো অন্তত আজকে একবার ছেলেটির সঙ্গে পরিচিত হতে। নিতান্তই কোনো বই কিংবা লেকচার শীটের বাহানায় নম্বর বিনিময় করে নিতে। সায়মা অনুভব করে যতোই সময় গড়াচ্ছে তার হৃদস্পন্দন কেবলই বেড়ে চলছে। তার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে। বড্ড তেষ্টা পাচ্ছে। কিন্তু জল নেই। ছেলেটির কাছে চেয়ে দেখবে কী! আর ঠিক তখনই ঘণ্টা পড়লো আর সবার আগেই ছেলেটি ছুটে বেরিয়ে গেলো।

No comments

Powered by Blogger.